প্রতিষ্ঠা ও নামকরণ
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময়তার নানা রুপ লক্ষ্য করা যায় এই বাংলায়,তারই এক রূপ বরেন্দ্র,যা বিশেষভাবে লক্ষযোগ্য। সেই বরেন্দ্র অধ্যসিত পোরশা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পোরশা ডিগ্রী কলেজ, যা নওগাঁ জেলার পশ্চিমে তথা দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। ধান ও আমের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চল, এ অনূকুলতার জন্য আছে বিস্তৃত মাঠ যার বেশীর ভাগের মালিক ক্ষয়িষ্ণ জমিদারদের উত্তরাধিকারী পোরশা গ্রামের শাহ চৌধুরীরা। শাহ চৌধুরীদের পারিবারিক কালচার পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক। এ অঞ্চলে ধর্মীয় (কওমী মাদ্রাসা) শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন থাকলেও ১৯৬৯ খ্রী: পূর্বে এ অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কোন কলেজ ছিল না। যদিও সে সময় পোরশায় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানি ব্যক্তি অনেকেই ছিলেন।তাঁদের একজন মরহুম সিরাজুল হক শাহ্ চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য, তিনি মনে করেছিলেন ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি এ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রয়োজন। তাঁর এ দাািয়ত্ববোধ থেকে এলাকার শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যক্তিদের সহযোগীতায় গড়ে তোলেন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার নামকরণ করা হয় “পোরশা কলেজ”। শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে যথা নিয়মে উৎসাহ উদ্দীপনায় কলেজে পাঠদান চলছিল ।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক পোরশায় শিহরণ জাগায়, এমতাবস্থায় কলেজে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন হয়। ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পূর্বে হানাদার বাহিনী বিতাড়িত হওয়ার সময় কলেজের অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি সাধন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পোরশা অঞ্চলে বাংলদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আসেন মরহুম ডাক্তার বসিরুল হক শাহ চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য, সে সময় তিনি কলেজ পূণ: গঠনে মনোযোগি হন। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সহতায় পোরশা কলেজ আবারও পূর্বের চেয়ে ভাল অবস্থান পায়। তৎকালিন সময়ে আমাদের জাতীয় চার নেতার মধ্যে দুজন শহীদ তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও শহীদ কামরুজ্জামান এ কলেজ উন্নয়নের জন্য পোরশা কলেজে আন্তরিকতার সহিত উপস্থিত হয়ে কলেজটিকে সর্বাঙ্গীন সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সার্বিক সযোযোগিতা করেন এ জন্য পোরশা বাসী আজও গর্বীত। ১৯৭৫ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শহীদ হন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সংগে এ অঞ্চলেও পরিবর্তনের বাতাস বহিতে শুরু করে,মাথা লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতার শত্রæ তথা আধুনিক শিক্ষা বিরোধী কিছু ব্যক্তি হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে কলেজ ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
এক পর্যায়ে এসে কলেজের পাঠদান সহ সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কলেজের দরজা,জানালা,ইট,টিন পর্যন্ত লুটপাট হয়ে যায়। ১৯৮৭ সাল পোরশা উপজেলায় উন্নয়নের কোন ছোয়া লাগেনি, ছিল না কোন পাকা রাস্তা ছিল না বিদ্যুৎ এ সময় পোরশা উপজেলার কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির প্রচেষ্টায় আবারও পূণ: প্রতিষ্ঠা করা হয় এ কলেজ, পূর্বের ধারাবাহিকতায় নামকরণ করা হয় পোরশা কলেজ। হাটি-হাটি পা-পা করে শুরু হয় পথ চলা, এ পর্যায়ে কলেজে বিজ্ঞ জনদের সিদ্ধান্তে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন স্বাধীনতা সংগ্রামের অকূতভয় সৈনিক বীর মুক্তযোদ্ধা জনাব এম.এম. রেজাউল হক যিনি বর্তমান পর্যন্ত উক্ত পদে কর্ম আছেন।
তাঁর কর্ম দক্ষতা বিছক্ষণতা, সময় উপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত অত্র প্রতিষ্ঠানকে এ অঞ্চলে মানুষের চাওয়া পাওয়ার শীর্ষ বিদ্যাপীঠে পরিণত করেছে। যা উচ্চশিক্ষা প্রসার নারী শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূণ ভুমিকা রাখছে। ০১/০৭/১৯৮৭ ইং তারিখে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অনুমোদন প্রদান করে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫-১৯৯৬ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ,বিএসএস (পাস) কোর্সের অধিভুক্তি লাভ করে। এ পর্যায়ে এসে অত্র কলেজের নামকরণ করা হয় “পোরশা ডিগ্রী কলেজ”। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৬-১৯৯৭ শিক্ষাবর্ষে বি,কম/বিবিএস (পাস) কোর্স অধিভুক্তি লাভ করে। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় এইচ,এস,সি (বিএম) কোর্স চালু হয়। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স অধিভুক্তি লাভ করে। বর্তমানে আরও দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালরু বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রায় দশ একর জমির উপর স্থাপিত এ কলেজে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, সরকারী ভাবে নির্মিত একটি পাকা দ্বিতল ভবন, কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে রয়েছে একটি তিনতলা পাকা ভবন এছাড়াও আদা-পাকা ভবনে ঘর রয়েছে ১৫টি, আছে একটি ছাত্রাবাস। আছে বিশাল আম বাগান। কলেজে আছে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রয়েছে একটি শহীদ মিনার। এছাড়াও অনেক অবকাঠামোগত সুবিধাসহ নওগাঁ-পোরশা মহা সড়কের পার্শ্বে অবস্থান হেতু সকলের কাছে কলেজটি দৃষ্টিনন্দন তথা সৌন্দর্য্য মন্ডিত বটে।
সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় বর্তমানে কলেজ গভর্নিং বোডির সম্মানিত সভাপতি নওগাঁ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার, তাঁকে সভাপতি হিসাবে পেয়ে সবাই গৌরবান্বিত। তিনি এ অঞ্চলের তথা পোরশা কলেজের ভাগ্যের নবদ্বার উন্মচিত করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় গত ০৫/১১/২০১৩ইং তারিখ পোরশা কলেজ মাঠে আসেন বঙ্গবন্ধু তনয়া বাঙ্গালী জাতীর নেত্রী গনতন্ত্রের মানস কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমন বার্তা নওগাঁ জেলা তথা পোরশার জনগণ এবং পোরশা কলেজ মাঠে আসবেন হেতু কলেজের সকল ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক কর্মচারী সকলের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল।
সত্যই সে শুভ দিনক্ষণে পোরশা কলেজ মাঠ একিভূত হয়েছিল প্রায় ১০ বর্গকিলো মিটার এলাকা জুড়ে। বিশাল এ ঐতিহাসিক জনসভায় জনসমাবেশ দেখে মননীয় প্রধান মন্ত্রী খুশি হয়ে অনেক প্রতিশ্রæতির পাশে একটি কথা দৃঢ় স্বরে বলেছিলেন আগামীতে পোরশা ডিগ্রী কলেজ কে জাতীয় করণ করা হবে। এ প্রতিশ্রæতি শোনার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক গগন বিদারী শ্লোগানে কেঁপে উঠেছিল। এ লক্ষ্যে মাননীয় সংসদ সদস্য ও কলেজের সম্মানিত সভাপতি মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর প্রতি কলেজ জাতীয় করণ করার জন্যে আবার আবেদন জানান। এ প্রেক্ষিতে পোরশা ডিগ্রী কলেজ জাতীয় করণের দাবীদার। যা পোরশা উপজেলার সকল শ্রেনী